আমাদের অনেক পুরাকীর্তি ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য সরকারি তদারকির বাইরে থেকে গেছে। ফলে সেগুলো হুমকির মুখে পড়ছে, অনেকগুলো বিনষ্টও হয়ে
গেছে। যেগুলো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত,সেগুলোর ওপরও আঘাত আসছে।
স্থানীয় প্রশাসন বা সরকারের নানা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও অনেক সময় পুরাকীর্তি সংরক্ষণের
বিষয়টি গুরুত্বহীনভাবে দেখে থাকেন। ফলে তাঁদের কাছ থেকে এমন কিছু নির্দেশনা আসে, যাতে হিতের বিপরীত হয়। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ঘিরে।
বিহারটি ঘেঁষে উঠছে বহুতল ভবন, যা পুরাকীর্তি সংরক্ষণের আইনপরিপন্থী। বারবার এমন ঘটনার কারণে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ পড়ার হুমকির মুখে আছে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।
বিষয়টি সত্যিকার অর্থেই উদ্বেগজনক।
বিশ্বস্ত সূত্র জানাচ্ছে, সম্প্রতি বিহার ঘেঁষে একটি
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের দ্বিতীয় তলা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। স্কুলটি পাহাড়পুর জাদুঘর থেকে ২০০ গজ, বিহারের মূল মন্দির থেকে ৪০০
গজ পূর্বে অবস্থিত। বিষয়টি নিয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও বিহার তদারকি কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানালে ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
যদিও ২০১৯ সালে একই ভবন নিয়ে একই ঘটনা ঘটে। দীর্ঘদিন নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার পর সেটি আবার শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী
বলছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যকে জানিয়ে নির্মাণকাজ আবার শুরু করা হয়।
অন্যদিকে এ ব্যাপারে সংসদ সদস্যের বক্তব্যও সন্তোষজনক নয়। আগের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি কারোরই অজানা নয় যে আইন অমান্য করে
রক্ষিত পুরাকীর্তির কাছে বহুতল ভবন নির্মাণের সুযোগ নেই এবং বিশ্ব ঐতিহ্যের কেন্দ্র থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বহুতল ভবন নির্মাণ সম্পূর্ণ ইউনেস্কো বিধিবিধান পরিপন্থী।
বিহারকে ঘিরে আরও বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যার মধ্যে আছে পুলিশ ফাঁড়ি, রেস্টহাউস ও কোয়ার্টার। সবগুলোর অবস্থানই বিহারের
এক কিলোমিটার দূরত্বের ভেতরে। এখানে একটি বহুতল ভবন তুলতে গিয়ে উদাহরণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে আগের তোলা বহুতল ভবনকে।
এভাবেই একটির পর আরেকটি বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে সেখানে।
বৌদ্ধ বিহার জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান ফজলুল করিম বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে এমনিতেই ইউনেস্কোর হুমকির মধ্যে আছি। পুলিশ ফাঁড়ি বিহার থেকে অনেক আড়ালে। আমরা রেস্টহাউস ও কোয়ার্টারগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। নতুন করে বৌদ্ধ বিহার ঝুঁকিতে পড়ুক, সেটা আমরা চাই না।’
বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের নাম বাদ পড়লে বিষয়টি আমাদের জন্য লজ্জাজনক হবে। ফলে নতুন করে সেখানে বহুতল ভবনের কোনো সুযোগ নেই। আগে যেসব বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে অতিসত্বর সেগুলোর অপসারণ বা স্থানান্তর করা হোক।
পাঠকের মতামত